অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকার মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল এবং সড়কের জায়গা দখল করে তৈরি অফিস ও খামারের শেড তৈরি করেছে আলোচিত পশুর খামার ‘সাদিক এগ্রো’। খামারটির অবৈধ অংশ উচ্ছেদে বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
সাড়ে তিন ঘণ্টার অভিযানে সাদিক এগ্রোর অফিস ও দুটি শেড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই দুই শেডের একটিতে ছিল কোরবানির ঈদের আলোচিত ‘উচ্চবংশীয়’ সেই ছাগলও। ১৭৫ কেজি ওজন, ৬২ ইঞ্চি উচ্চতার ছাগলটিসহ সব ছাগলই অভিযান শুরুর পরপরই খামার থেকে সরিয়ে নেয় সাদিক এগ্রোর লোকজন।কোরবানির ঈদ ঘিরে সাদিক এগ্রো আলোচিত ছাগলটির দাম হাঁকে ১৫ লাখ টাকা। এত দামের পেছনে ব্যাখ্যা ছিল উন্নত জাত ও বংশ মর্যাদা। সেই ছাগল কিনতে গিয়ে ভাইরাল হন তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাত। সেই ছাগলের রশি ধরে টান পড়ে ইফাতের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের। ছেলের ছাগলকাণ্ডের পর তিনি হারিয়েছেন এনবিআরের পদ। তার সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার খাল দখল করে গড়ে তোলা সাদিক এগ্রোর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানে নামে সিটি করপোরেশন। তবে এই উচ্ছেদ অভিযানের সঙ্গে ছাগলকাণ্ডের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ম্যাজিস্ট্রেট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অভিযান চালানোর খবরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এলাকার মানুষজন জড়ো হয় সাদিক এগ্রোর সামনে। সেখানে অনেককে আলোচিত সেই ছাগলের সঙ্গে ছবিও তুলতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, সাদিক এগ্রোর পেছনে গড়ে ওঠা বস্তির লোকজনকে ভোর থেকেই তাদের আসবাবপত্র এবং ঘরের টিন, বাঁশ সরিয়ে নিতে দেখা যায়।অভিযানের খবরে একটি শেড থেকে আগেই গরু সরিয়ে নিয়েছিল সাদিক এগ্রো। অভিযান শুরুর পর খামার থেকে সব ছাগল সরিয়ে পাশের একটি মাঠে নেওয়া হয়। তবে সেই মাঠে আলোচিত ছাগলটি দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে সাদিক এগ্রোর কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মালিক ইমরান হোসেনকে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। বুধবার থেকে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার সাদিক এগ্রোর ওয়েবসাইটও।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা সাদিক এগ্রোয় পৌঁছায়। সেসময় সাদিক এগ্রোর জমির মালিক আব্দুল আলীমের ভাগ্নে মো. ইউসুফ জমির দলিল নিয়ে উপস্থিত হন। তারা উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব থাকা ডিএনসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাববীর আহমেদকে দলিল দেখান। এ নিয়ে কিছুক্ষণ তাদের মধ্যে কথা হয়। এর পরপরই অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট।
পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কাগজপত্র দেখে যেটা বুঝেছি তা হলো– এখানে এক বিঘার মত জায়গা খালের ওপর। উনি (ইউসুফ) বলতে চাচ্ছিলেন মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু আমাদের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভেয়ার আছে, সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আছেন। আমরা দেখেছি তারা ভুল বলছে। সেই হিসেবেই উচ্ছেদ অভিযান চলছে।”তিনি বলেন, “উনি (ইউসুফ) বলতে চাচ্ছিলেন, আমরা নোটিশ দেইনি। আমরা গত মাসের ১৮ তারিখ তাকে নোটিস দিয়েছি। তারা কোনও উত্তর দেননি।”
ঈদের আগেই এই অভিযান চালানোর পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “আমরা আগেই এই অভিযান পরিচালনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঈদ বলে করিনি। কারণ এর ভোক্তা পর্যায়ে একটি প্রভাব আছে। এখন আমরা তাই এই অভিযান চালাচ্ছি।”
এই উচ্ছেদ অভিযানের সঙ্গে ছাগলকাণ্ডের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে মোতাকাববীর বলেন, “আমরা কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নই। যাদের স্থাপনা খালের মধ্যে এসেছে আমরা তাদের উচ্ছেদে কার্যক্রম চালাচ্ছি। খাল উদ্ধার সিটি করপোরেশনের ধারাবাহিক কাজ। এর আগেও আমরা বসিলার দিকে খালের অংশে বাসস্ট্যান্ড সরিয়েছি। আমরা ধারাবাহিকভাবে খালগুলো উদ্ধার করার কাজ করে যাচ্ছি।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসিফ আহমেদ এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।